ফরিদপুর প্রতিনিধি: দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীকে আটকে মারধর করার ঘটনা নিয়ে ফরিদপুরের সালথা ও বোয়ালমারী সীমান্তে দু’পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষে ৬৫ বছর বয়সী মো. নান্নু ফকির নিহত হয়েছেন। পুলিশসহ আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫০ জন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ভাঙচুর করা হয়েছে অন্তত ১০টি দোকানপাট।
বুধবার রাতে সালথা-বোয়ালমারী সীমান্তবর্তী কুমার নদের ব্রীজের উপর সংঘর্ষের এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
উভয় উপজেলার একাধিক বাসিন্দা জানান- সালথার যদুনন্দী ও বোয়ালমারীর রূপপাত ইউনিয়ন পাশাপাশি। মাঝে রয়েছে নদের উপর ব্রীজ। যেকারণে উভয় পারের সাধারন লোকজন ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা এপার-ওপারে থাকা বাজার ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যাতায়েত করে থাকেন। কয়েক মাস আগে বোয়ালমারীর রূপপাত ব্রাহ্মনডাঙ্গা উচ্চ-বিদ্যালযয়ের পরিচালনা পর্ষদ কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন সালথার যদুনন্দীর বাসিন্দা মো. কাইয়ুম মোল্যা।
নির্বাচনের পর থেকে ওই বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি রূপপাত ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান সোনা মিয়ার বর্তমান সভাপতি কাইয়ুম মোল্যার রিবোধ চলে আসছিল। এই বিরোধের জেরে উভয় পারের লোকজনের মধ্যে কয়েকবার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
চলমান বিরোধের মধ্যে বুধবার বিকালে কাইয়ুম মোল্যার সমর্থক ইলিয়াস মোল্যার ছেলে দশম শ্রেণীতে শিক্ষর্থী মেহেদী হাসান রূপপাত উচ্চ-বিদ্যালয়ে প্রাইভেট পড়তে গেলে সোনা মিয়ার সমর্থক কয়েকজন শিক্ষার্থী তাকে আটকিয়ে রেখে মারধর করে। বিষয়টি উভয় পারের লোকজনের মধ্যে জানাজানি হলে তারা ব্রীজের দুই পারে দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র নিয়ে জড়ো হতে থাকেন। একপর্যায় সন্ধ্যা ৭টায় সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। এ সংঘর্ষ ও ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলে রাত ৯টা পর্যন্ত। সংঘর্ষের সময় ১০টি দোকানঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করে সংঘর্ষকারীরা।
এতে পুলিশসহ উভয় পারের অন্তত ৫০ জন আহত হয়। আহতদের ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুকসেদপুর ও বোয়ালমারী স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়। এরমধ্যে মুকসেদপুর স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টা দিকে মারা যান নান্নু ফকির। তিনি সালথার যদুনন্দী গ্রামের মৃত হাতেম ফকিরের ছেলে।
তবে সংঘর্ষের বিষয় উভয় পারের দুই নেতার বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার ফোন করা হলেও তাদের ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার (নগরকান্দা-সালথা সার্কেল) মো. সুমিনুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে শর্টগানের কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছুঁড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষ চলাকালে ইটের আঘাতে আহত হয়ে নান্নু ফকির নিহত হন। তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। এদিকে সংঘর্ষ সামাল দিতে গিয়ে সালথা ও বোয়ালমারী থানার ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। তাদেরও চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এলাকার পরিবেশ ভাল রাখতে সেখানে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট