নিজস্ব প্রতিবেদকঃ প্রতিবন্ধী মোজাম্মেলের স্বপ্ন নিয়ে গড়া প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান অর্থের অভাবে ধীরগতিতে পড়ে গেছে। স্বপ্ন তার দুচোখ জুড়ে, স্বপ্নগুলোও রঙ্গিন। প্রতিবন্ধীতার কাছে হার না মেনে প্রতিবন্ধীদের কর্মসংস্থান নিয়েই স্বপ্ন তার।
অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়েই সাজাতে চান রঙ্গিন জীবন। কিন্তু নিজের কাছে থাকা ও ঋণের নেয়া মোট ৮ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করার মাঝপথেই অর্থনৈতিক সংকটে যেন তার স্বপ্ন দুমড়ে-মুচড়ে যাওয়ার পথে। তারপরেও হার না মেনে আশায় বুক বেঁধে আছেন।
এই অদম্য ইচ্ছাশক্তির মানুষটি ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার ঘারুয়া ইউনিয়নের রাজেস্বরদি গ্রামের হাফেজ মোঃ মোতাহের হোসেনের বড় ছেলে শারিরিক প্রতিবন্ধী মোঃ মোজাম্মেল হোসেন। জন্ম থেকেই দুটি পা বিকলঙ্গ, স্ট্রেচারেই ভর করে চলেন। বাবাও একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। সংসারের পাচ ভাই-বোনের মধ্যে বড় তিনি।
সংসারের হাল ধরতে ২০০৯ সালে এস.এস.সি পাশ করেই কম্পিউটার চালনায় প্রশিক্ষন নিয়েই চলে যান রাজধানীতে। কাজ শুরু করেন একটি বেসরকারি কোম্পানিতে। কিন্তু সেখানে প্রতিবন্ধীতার বৈষম্য তাকে চরমভাবে আঘাত করেছে। কিন্তু ভেঙ্গে পড়েননি, বরং প্রতিবন্ধীদের নিয়েই কাজ করার স্বপ্ন বুনেছেন। কাজ ছেড়ে চলে আসেন নিজ এলাকায়। ২০১৮ সালে পাশ্ববর্তী মুকসুদপুর উপজেলাধীন দিগনগর এলাকার ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন সাড়ে ৩৭ শতাংশ জমি ৫ বছরের জন্য লিজ নেন।
জয়েন্ট স্টক থেকে লাইসেন্স নেন এফএসএম প্লাস্টিক ইন্ডাষ্ট্রি লিমিটেড নামের প্লাস্টিক রিসাইকেলিং কোম্পানির। যেখানে ৩০ জন প্রতিবন্ধি নিয়ে কাজ করতে চান। সেই লক্ষ্যে ঐ জমিতে মাটি কেটে দুটি ঘরও তোলেন, তৈরি করেন একটি ২৮ ও ৫৫ ফিটের সেড ও হাউজিং। প্লাস্টিক রিসাইকেলিং করার জন্য ১০ লক্ষ টাকা মূল্যের একটি মেশিন অর্ডার করেন এবং অগ্রিম ৩ লক্ষ টাকাও জমা দেন। সবমিলে ৮ লক্ষ টাকা খরচ করেন। কিন্তু করোনার প্রাদুর্ভাব ও অর্থনৈতিক সংকটের কারনে বন্ধ হয়ে যায় সবকিছু। পুনরায় চালু করার জন্য অর্থ সম্পদ না থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্থানীয় সাংসদ, জেলা প্রশাসকের নিকট সহযোগিতা কামনা করেছেন।
প্রতিবন্ধী মোজাম্মেল হোসেন বলেন, আমি একজন প্রতিবন্ধী হয়ে একটি কোম্পানিতে কাজ করার সময় যে বৈষম্যের শিকার হয়েছি, তার প্রতিক্রিয়ায় আমাকে স্বপ্ন জুগিয়েছে যে নিজেই একটি প্রতিষ্ঠান করবো, যেখানে শুধু প্রতিবন্ধীরাই কাজ করবে, আমার মতো প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি ব্যতিক্রমী কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। যাতে করে তারা ন্যুনতম সম্মান নিয়ে পরিবার পরিবর্গ নিয়ে বেচে থাকতে পারে। এ চিন্তা ভাবনা থেকেই প্লাস্টিক রিসাইকেলিং করার জন্য প্রতিষ্ঠান চালু করার যাত্রা শুরু করি। কারন, এটার বাজারে অনেক চহিদাও রয়েছে। যেটার কারনে পরিবেশও ভালো থাকবে। কিন্তু এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে গিয়ে নিজের কাছে জমানো টাকা ও কিছু টাকা ধার দেনা করেই ভিত্তি দাড়া করেছি। সরকারি নিয়ম তান্ত্রিক মোতাবেক আমি সকল কাগজপত্র সম্পূর্ণ করেছি। এর মাঝেই করোনার কারনে বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিষ্ঠান দাড় করানোর প্রথম ধাপের কার্যক্রম শেষে করতেই দেখতে পাই আরো টাকার প্রয়োজন কিন্তু আমার কাছে এখন আর টাকা নেই। এ পর্যন্ত আমার প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে।
তিনি বলেন, বাকি টাকাগুলো কারো কাছ থেকে বা কোনো সংস্থা থেকে সহযোগিতা পেলে আমি আমার স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে পারবো। বাস্তবায়িত হলে ৩০ জন প্রতিবন্ধী নিয়ে কাজ শুরু করবো। যাতে প্রতিবন্ধীরা ভিক্ষা-বৃত্তিতে জড়িয়ে না পড়েন। এজন্য সরকারের নিকট আর্থিক সহযোগিতা কামনা করছি।
তার বাবা বলেন, আমার ছেলে যা করছেন তার সাথে আমি একমত। কারন, আমি জানি একজন প্রতিবন্ধীর জ্বালা। ও নিজেও একজন প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধীদের নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছেন তা যেন স্বার্থক হয়। এজন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রী ও স্থানীয় এমপি’র কাছে সহযোগিতা চাই।
এ বিষয়ে মানবাধিকার কর্মী আইন ও মানবাধিকার সহায়তা ফাউন্ডেশনের মাসুদ খান বলেন, আমাদের কাছে সহযোগিতা পাওয়ার জন্য একটি আবেদন করেন। সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে দেখেছি তার নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে নির্মান কাজও বন্ধ রয়েছে। সেই হিসেবে প্রতিবন্ধী মোজাম্মেলের পাশে দাড়ানোর জন্য আমি ফরিদপুর-৪ আসনের সংসদ সদস্য নিক্সন চৌধুরী এমপি, ফরিদপুর জেলা প্রশাসক ও ভাঙ্গা উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে সহযোগিতা কামনা করেন।
ওয়েবসাইট ডিজাইন প্রযুক্তি সহায়তায়: ইয়োলো হোস্ট