নুরুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি: এবার বন্যায় দেশের একাধিক এলাকা প্লাবিত হলেও পানির অভাবে পড়েছেন ফরিদপুরের সালথা উপজেলার প্রধান অর্থকরী ফসল সোনালী আশ পাট চাষিরা। প্রতিবছর এই সময় বর্ষার পানিতে খাল-বিল, নালা ও নিচু জমি থৈ থৈ করে। তবে থৈ থৈ পানির সেই দৃশ্য এবার আর মিলছে না। নদ-নদী ছাড়া কোথাও পানির দেখা নেই। যেকারণে চলতি মৌসুমে সোনালী আঁশ পাট পঁচানো নিয়ে চিন্তার ছাপ কৃষকদের চোখে-মুখে। বন্যার পানির অপেক্ষায় থেকে একদিকে মরে যাচ্ছে পাটের গাছ। সেই সাথে মরে যাচ্ছে কৃষকদের সোনালী স্বপ্ন। শেষমেষ কোন উপায় না পেয়ে কৃষকরা তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় মাটি খুড়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। পানির জন্য তাদের হাহাকার যেন দেখার কেউ নেই।
শুক্রবার সরেজমিনে সালথার বিভিন্ন স্থানে দেখা যায়, পানির অভাবে শুকনো জায়গা গর্ত করে পাট জাগ দেওয়ার ব্যবস্থা করছেন কৃষকরা। অনেকেই আবার পুকুরে স্যালো মেশিনের পানি দিয়ে পাট জাগ দিচ্ছেন। এতে কৃষকদের অতিরিক্ত টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সালথা উপজেলার ভাওয়ালের মধ্যদিয়ে বয়ে যাওয়া কুমার নদীর পানিতে দেখা যায় ২-ইঞ্চি পরিমান পাট পচনের বৃষ্ঠার স্তর।
ওখানকার কৃষক কাইয়ুম মোল্যা বলেন, কুমার নদীর পানি পানি এতটাই বিষাক্ত হয়ে গেছে যে পাট জাগ দিতে গিয়ে আমার শরীরের পচন (ঘা) শুরু হয়ে যাওয়ায় ২ সপ্তাহ ধরে পানিতে নামতে পারছি না।
হৃদয় হোসেন নামে আরেক কৃষক বলেন, পানির অভাবে পাট কাটতে পারছি। রোদে পুড়ে লালচে হয়ে ক্ষেতেই পাট মরে যাচ্ছে। জমির পাট কাটতে গতবারর তুলনায় এবার দ্বিগুণ খরচও গুনতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে পাট নিয়ে আমাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।
উপজেলার গট্টি ইউনিয়নের পাট চাষি হারুন মিয়া ও ভাওয়াল ইউনিয়নের পুরুরা সাধুপাড়া গ্রামের পাট চাষি মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, চলতি মৌসুমে আমাদের মুখে মুখে হাহাকার। অনাবৃষ্টি আর নদ-নদীর অব্যবস্থাপনার কারণে চরম পানি সংকটে পড়েছি আমরা। ফলে কিছুটা রেটিং পদ্ধতিতে পানির অভাবে মাটি খুড়ে গর্ত করে পাট জাগ দিচ্ছি। তারা আরও বলেন, সালথার প্রায় গ্রামের ভিতর বয়ে গেছে কুমার নদসহ তা সংলগ্ন ছোট ছোট নদী ও খাল। যদিও আষাঢ়-শ্রাবণ দুই মাস বর্ষাকাল। অন্যান্য বছর এই সময় নদ-নদী ও খাল-বিলে পর্যাপ্ত পানি থাকতো। কিন্তু এবার সেই চিত্র দেখা যাচ্ছে না।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ফরিদপুর স্লুইচ গেইট খুলে দিলেই সালথার নদ-নদী ও খাল-বিল পানিতে ভরে যাবে। এতে তাদের পানির অভাব পুরণ হতে পারে। তাই দ্রুত স্লুইচ গেইট খুলে দেয়ার দাবী জানান তারা।
সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, সালথা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জীবাংশু দাস বলেন, এ বছর সালথায় ১২ হাজার ৩৩০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে, যা লক্ষমাত্রার চেয়ে বেশি। মোট আবাদি জমির প্রায় ৯১ শতাংশ জমি সোনালি আঁশের দখলে। উৎপাদনও আশানুরূপ। কিন্তু পর্যাপ্ত বৃষ্টির অভাবে ঠিকমত পাট জাগ দিতে পারছেন না কৃষকেরা। কোথাও কোথাও সামান্য পরিমাণে পাট শুকিয়ে মারাও যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ফরিদপুরে বেরি বাঁধ সংলগ্ন স্লুইস গেট খুলে দেওয়া হলেও পানি মাঠে প্রবেশ করছে না। এমতাবস্থায় ছোট ছোট ডোবা, খাল, পুকুরে স্যালো মেশিন দিয়ে পানি তুলে যতটা সম্ভব পাট জাগ দেবার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। কোথাও কোথাও রিবন রেটিং এর জন্যও পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে।