নিরঞ্জন মিত্র নিরুঃ সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (সগবি), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), ফরিদপুর এর উদ্যোগে ভাসমান বেডে সব্জি ও মসলা চাষ গবেষণা, সম্প্রসারণ ও জনপ্রিয়করণ প্রকল্প (বারি অংগ) এর অর্থায়নে গত (২৩ ফেব্রুয়ারি) ও (২৪ ফেব্রুয়ারি) মাদারীপুর জেলার রাজৈর উপজেলার তেঁতুলবাড়ী ও আমগ্রামে যথাক্রমে ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তির উপর কৃষক প্রশিক্ষণ ও মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়।
ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) এর অঞ্চল প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. সেলিম আহম্মেদ এর সভাপতিত্বে, অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন বরিশাল আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ও প্রকল্প পরিচালক ড. মো. মোস্তাফিজুর রহমান তালুকদার।
প্রধান অতিথি তাঁর বক্তব্যে বলেন, প্রচলিত পদ্ধতিতে কৃষকেরা সাধারণত বর্ষাকালে ভাসমান বেডে সবজি ও মসলা ফসলের চারা (লাউ, মরিচ, বোম্বাই মরিচ, সীম, পেঁপে, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়া, বরবটি প্রভৃতি) এবং সীমিত কয়েকটি সবজি (যেমন- লালশাক, পুঁইশাক, ঢেঁড়স, পানিকচু) এবং মসলা (যেমন- হলুদ) উৎপাদন করে। কিন্তু অনুন্নত জাতের ব্যবহার ও ভাসমান কৃষি ভিত্তিক আধুনিক প্রযুক্তির অভাবে প্রচলিত পদ্ধতিতে সবজি ও মসলা ফসলের কাঙ্খিত ফলন পাওয়া যায় না এবং উৎপাদিত চারাও মানসম্পন্ন হয় না।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এর বিজ্ঞানীরা দীর্ঘদিন যাবত গবেষণা করে সবজি ও মসলা ফসলের বেশ কয়েকটি উচ্চ ফলনশীল ও আধুনিক জাত উদ্ভাবন করেছেন যা ‘‘ভাসমান কৃষি’’ পদ্ধতিতে চাষের জন্য প্রর্বতন করা যেতে পারে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রযুক্তি যেমন প্রচলিত ভাসমান বেডের উন্নয়ন, ভাসমান বেডে উৎপাদিত ফসলের বহুমুখীকরণ, সবজি ও মসলা ফসলের মানসম্পন্ন চারা উৎপাদন, ফসল পদ্ধতি ও কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন, গাছের পুষ্টি/সার ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত সবজি ও মাছ চাষ, ভাসমান বেডে শাকসবজি ও মসলা ফসলের ক্ষতিকারক পোকামাকড় ও রোগ-বালাই সনাক্তকরন ও তাদের জৈব বালাই ব্যবস্থাপনা, ইদুরের সমন্বিত জৈবিক দমন ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি উদ্ভাবন হয়েছে যা প্রশিক্ষণ এর মাধ্যমে কৃষক জানতে পারবে। কৃষকদের বারি উদ্ভাবিত নতুন জাত ও প্রযুক্তি দ্বারা ভাসমান কৃষি আবাদের জন্য প্রধান অতিথি অনুরোধ করেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বরিশাল রহমতপুর আঞ্চলিক কৃষি গবেষণা কেন্দ্র (বারি) এর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. গোলাম কিবরিয়া।
এসময় অনুষ্ঠানে ড. মো. আলিমুর রহমান, ড. মো.মাহবুবুর রহমানসহ সংশ্লিষ্ট বৈজ্ঞানিক সহকারী ও কৃষক -কিষাণী উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ফরিদপুর সরেজমিন গবেষণা বিভাগ (বারি) এর বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ. এফ. এম. রুহুল কুদ্দুস। তিনি তার স্বাগত বক্তব্যে বলেন, বাংলাদেশে ভাসমান কৃষি পদ্ধতি বিশ্ব কৃষি ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় বহির্বিশ্বে প্রযুক্তিটির পরিচিতির পাশাপাশি দেশের পরিচিতিও বৃদ্ধি পাচ্ছে ফলশ্রুতিতে বিএআরআই থেকে ভাসমান কৃষির উপযোগী জাত ও প্রযুক্তি কৃষি বিজ্ঞানী কর্তৃক উদ্ভাবন হচ্ছে এবং প্রশিক্ষণ ও কৃষক সমাবেশের মাধ্যমে তা কৃষক পর্যায়ে সম্প্রসারণ প্রয়োজন।
কৃষক প্রশিক্ষণের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে কারিগরী পর্বে পাওয়ার পয়েন্ট এর মাধ্যমে তাত্ত্বিক উপস্থাপনা দেখানো হয়। ভাসমান কৃষির আধুনিক প্রযুক্তি যেমন নতুন নতুন ফসলের সংযোজন, কৃষিতাত্ত্বিক ব্যবস্থাপনা যেমন বেড তৈরী, চারা তৈরী, সার, সেচ ও আন্তঃপরিচর্যা এবং ফসল সংগ্রহ প্রযুক্তি সম্পর্কে বিভিন্ন বক্তা আলোচনা করেন।
বক্তব্য প্রদান শেষে কৃষকদের সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন উত্তরপর্ব অনুষ্ঠিত হয়। প্রশ্ন পর্বে মাঠ দিবসে ৮০ জন কৃষক কিষানী অংশগ্রহনের মাধ্যমে প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়। এবং বারি উদ্ভাবিত ভাসমান কৃষির জন্য লাগসই প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদিত ফসল পরিদর্শণ করেন। তারাঁ প্রচলিত পদ্ধতির মাধ্যমে ভাসমান কৃষিতে সব্জি আবাদের পরিবর্তে বারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তিকে গ্রহন করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ও প্রকল্প পরিচালকবৃন্দ সবাইকে নতুন প্রযুক্তি গ্রহন করে ভাসমান কৃষিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্য অনুরোধ করেন।