খায়রুল আলম রফিক: ফেসবুকে প্রেমের ফাঁদে ফেলে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে বেধম প্রহারে মৃত্যুশয্যায় ষোল বছর বয়সী ফজলে রাব্বী।
ময়মনসিংহের ভালুকার তামাত এলাকার বাসিন্দা জালাল উদ্দিনের ছেলে এখন মূমুর্ষ অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে।
জানা গেছে, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলার সোনামূখির চর গ্রামের মন্টু মন্ডলের মেয়ে জয়শ্রীর সাথে ফেসবুকে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। তাদের সম্পর্ক পোক্ত হয় তিন বছরের ফেসবুক প্রেম। এসময় জয়শ্রী কৌশলে ফজলে রাব্বীর নিকট থেকে নানা প্রলোভনে হাতিয়ে নেয় দুই লক্ষাধিক টাকা ও একটি মোবাইল ফোন।
১১ এপ্রিল জয়শ্রী মন্ডল নিজের বাড়িতে ফজলে রাব্বীকে টাকা স্বর্ণালংকার নিয়ে আসতে বলে, তাদের বিয়ে হবে এমন কথা জানান। জয়শ্রীর বাবা মা রাজি। খুশিতে আত্বহারা ফজলে রাব্বি মায়ের ৪ ভড়ি ওজনের গয়না স্বর্ণালংকার, নগদ দেড় লাখ টাকা নিয়ে হাজির হন জয়শ্রীর বাড়িতে। কথামত বাড়িতে এসে সে রীতিমত হতবাক।
জয়শ্রী, রাজু খলিফাকে ফোন দেয় তার দলবল নিয়ে জয়শ্রীর বাড়িতে আসে উলকাম গটফাদার নিশাখর রাজু কাওছার খলিফার ছেলে ও তার দলের, মোহরের ছেলে, শাকিল, বেলায়েতের ছেলে পারবেস ও রফিক। রাব্বিকে রাস্তা দিয়ে মারিতে মারিতে টেনে হেচঁড়ে দেওড়া বাজাড়ে নিয়ে যায়।
রাজুর দলের লোকজনেরা জয়শ্রীরর বাবা-মা, আত্বীয়- স্বজন, তাদের লোকজন আচমকা এলাপাথাড়ি মারধর শুরু করে ফজ রাব্বিকে। চলতে থাকে কিল ঘুষি বেঁধে রেখে নির্যাতন করে। আরও জানাযায় রাজু খলিফা চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজ এলাকায় লক্ষ লক্ষ টাকা নিরীহ মানুষদের নিকট সুদে টাকা লাগিয়ে থাকেন। এক লক্ষতে, এক লক্ষ বা ৭০ হাজার টাকা করে হাতিয়ে নেয়। বহু মানুষের কাছে থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়ে থাকে।
এলাকার সন্ত্রাসের রাজস্ব কায়েম, ক্ষমতার প্রভাব, মাস্তান ও সন্ত্রাসী রাজুর ও রফিকের আতংকে, এলাকার নিরীহ মানুষের জিবনের নেই কোন নিরাপত্তা। জরুরি ভাবে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ সহ ন্যায় বিচার দাবি করে, এলাকার জনগণ।
স্বর্ণালংকার টাকা পয়সা রেখে আরো ৫ লাখ টাকা বাড়ি থেকে নিয়ে আসতে বলা হয়েছিল। তাকে একটি ঘরে আটকে রেখে এ নির্যাতন চালায়। নির্মম পাষবিক এই নির্যাতনের খবর পোঁছায় স্থানীয় দেওড়া বাজার দোকানদারদের কানে।
ছেলেটিকে মেরে ফেলেছে এমনটাই খবর আসে তাদের কানে। তারা গিয়ে রাব্বীকে মুমুর্ষ অবস্থায় উদ্ধার করে ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। সেখানকার চিকিৎসকরা আশঙ্কাজনক দেখে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করেন। সেখানকার চিকিৎসক রাব্বিকে মূমুর্ষ দেখে ঢাকা মেডিকেল কলে হাসপাতালে প্রেরন করেন। মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে এখন ফজলে রাব্বি।
এদিকে মুমূর্ষ এই ফজলে রাব্বীকে আসামি করে পর্ণোগ্রাফি আইনে একটি মামলা আমলে নেন ভাঙ্গা থানা পুলিশ। জয়শ্রী নামের মেয়েটি বাদী হয়ে এই মামলা দায়ের করেন।
মামলার প্রেক্ষিতে রাব্বী এখন পুলিশ হেফাজতে থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ফজলে রাব্বীর মা রাশিদা জানান, জয়া আমাদের অগোচরে ছেলের নিকট থেকে টাকা নিতো। এখন ৫ লাখ টাকা দাবি করেছে তার পরিবার। ছেলে হাসপাতালে শুনেই টাকা সংগ্রহ করে আমার মেয়ে রাব্বীর বোন জুঁইকে সাথে নিয়ে যাই ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। এরপর যাই ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জ ওসির কাছে। অভিযোগ দিতে গেলে ওসি অভিযোগ নিবেন না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন। পরে ওসি অশোভন আচরণ করেন ফজলে রাব্বির বড় বোন জুঁইয়ের সাথে। আমাদেরকেও ফজলে রাব্বীর মত গ্রেফতার করা হবে বলে শাঁশিয়ে থানা থেকে বের করে দেন।
এত কিছুর পরও উপরন্তু, গুরুতর অসুস্থ ফজলে রাব্বীকে হাসপাতাল থেকে পুলিশ তাদের হেফাজতে থানায় এনে প্রায় ৩ ঘন্টা হাজতে আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। এই ৩ ঘন্টা অতিবাহিত হওয়ার সময় মানুষ মৃত্যুর আগে খিচুনি উঠলে যা করে ফজলে রাব্বীর অবস্থাও তেমনি হয়। মানবাধিকার কর্মী খন্দকার সজল জানান, অসুস্থ ব্যক্তিকে থানা হাজতে আটকে রাখা মানবাধিকার লঙ্ঘন। পুলিশের কাছে এটা কাম্য নয়।
মামলার তদন্তকারী অফিসার এসআই তাহাসান জানান, ফজলে রাব্বিকে অমানষিক নির্যাতন করা হয়েছে। নির্যাতন করেছে মামলার বাদী – স্বাক্ষী ও তাদের লোকজন। প্রাথমিক তদন্তে এমনই পাওয়া গেছে মন্তব্য করে বলেন, ফজলে রাব্বীর পক্ষ থেকে আদালতের মাধ্যমে আবেদন করলে রাব্বী জামিন পেতে পারে।
ভাঙ্গা থানার ওসি সেলিম রেজা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে পর্ণোগ্রাফী আইনে মামলা হয়েছে। ফজলে রাব্বীকে নির্যাতন করা হয়েছে সত্যতা পাওয়া গেছে। ফজলে রাব্বীর পরিবারের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে অভিযোগ পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।