নিরঞ্জন মিত্র নিরুঃ ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় ১৯৭১ সালের ১৭ মে সোমবার তৎকালীন দুর্গম গ্রাম হাটকৃষ্ণপুরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নির্মম ভাবে হিন্দুদের উপরে হত্যাযজ্ঞ চালায়।
হানাদার বাহিনী ও তাদের দোসররা নিরস্ত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে এই গ্রামের আটজনের বেশি নিরস্ত্র মানুষকে হত্যা করে, এবং পুড়িয়ে দেওয়া হয় বসত বাড়ীঘর, নির্যাতন করে শিশু ও নারীদের উপরে।
১৯৭১ সালের ১৭ মে দিনটি ছিল সোমবার। রাতের খাবার শেষ করে সবাই যখন প্রতিদিনের মতো ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই অতর্কিত নিরস্ত্র গ্রামবাসীর ওপর ঘাতকরা আক্রমণ চালায়।
সেদিন হাট কৃষ্ণপুর গ্রামে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গণহত্যায় শহীদ হন যারা, তার মধ্যে একবারে যে আটজনকে ব্রাশফায়ার করে হত্যা করা হয়েছিলো। সেই সময় মুক্তিযুদ্ধে আটজন শহীদ হয়েছিলেন। সেই শহীদেরা হচ্ছেন, শহীদ সুবর্ণ মিত্র, শহীদ মিহির মিত্র, শহীদ কৃষ্ণা দাশী সাহা, শহীদ ভুপতি সাহা, শহীদ ননী সাহা, শহীদ হরিপদ সাহা, শহীদ মলিন শীল, শহীদ অলোক সাহা সহ নাম না জানা আরো অনেক।
১৯৭১ আমরা শহীদ পরিবার শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির আয়োজনে, (১৭ মে) মঙ্গলবার বিকালে কৃষ্ণপুর মহাশ্মশানে শহীদের আত্মার শান্তি কামনায় জাতীয় সংগীত পরিবেশন, মোমবাতি প্রজ্বালন সহ ধর্মীয় অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সদরপুরের ১৭ মে গণহত্যার ৫২তম বার্ষিকী পালিত হয়েছে।
এসময় সেখানে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল তদন্ত সংস্থার সদস্য ও ১৯৭১ আমরা শহীদ পরিবার শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা পি. কে সরকার।
কৃষ্ণপুর শহীদ পরিবারের সন্তান লক্ষণ চন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে, আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন ১৯৭১ আমরা শহীদ পরিবার শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি মোঃ সাজ্জাদুল হক সাজ্জাদ।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন সদরপুর উপজেলা শহীদ স্মৃতি সংরক্ষণ কমিটির সভাপতি ও কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রাণ চৌধুরী পিরু।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সদরপুরের বীর মুক্তিযোদ্ধা সত্য রজ্ঞন কর্মকার, শহীদ সুবর্ণ মিত্রের কন্যা ও শহীদ মিহির মিত্রের বোন নীলিমা রাউত রাউত, শহীদ পরিবারের সন্তান প্রদীপ কুমার মিত্র, শহীদ পরিবারের নাতি অশোক কুমার রাউত (বাপন), স্থানীয় সরোজ কুমার প্রমূখ।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সদরপুর উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আব্দুল মজিদ মিয়া, পরিতোষ সাহা সহ স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।
শহীদ সুবর্ণ মিত্রের কন্যা নীলিমা রাউত তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ১৯৭১ সালের ১৭ মে এই দিনে আমার বাবা ও ভাই হারা হয়েছি। যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বুলেটের আঘাতে শহীদ হন আমার বাবা ও ভাই। স্মৃতি ফলকে নাম থাকার পরেও এখনো গেজেট ভুক্ত হয়নি। তিনি আরো বলেন আমার জীবনের শেষ প্রান্তে এসেছি, শুধু দেখে যেতে চাই শহীদ পরিবারের স্বীকৃতি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট আমার আকুল আবেদন সদরপুর মিত্র পরিবারকে শহীদ পরিবার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।
সভায় বক্তারা এই শহীদ পরিবার কে সরকারি গেজেটে অর্ন্তভুক্তি করার দাবি তোলেন। বক্তারা অবিলম্বে শহীদ বেদীতে নাম থাকা সকল শহীদদের রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি ও গেজেটভুক্ত করার জোর দাবি জানান।