জিল্লুর রহমান রাসেলঃ অত্যন্ত জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মধ্য দিয়ে বিয়ে হলো ফরিদপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে বেড়ে ওঠা এতিম আঙ্গুরীর। পরিবার না থাকলেও কোনো কমতি ছিল না আয়োজনে। বিয়েতে খাওয়ানো হয়েছে ৬০০ অতিথি। এদের মধ্যে বরযাত্রী ছিল ৫০ জন।
শনিবার (২০ আগস্ট) দুপুরে হাবেলী গোপালপুরে অবস্থিত কেন্দ্রের ভেতরেই ২ লাখ টাকা দেনমোহরে আঙ্গুরীর বিয়ে হয়। বর শহরের বায়তুল আমান এলাকার ইউনুছ সরদারের ছেলে মুরাদ সরদার।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ফরিদপুর পৌর এলাকার বায়তুল আমানের বাসিন্দা আঙ্গুরীর বাবা তালেব শেখ মারা যান জন্মের আগেই। চার বছর বয়সে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মা ঝর্না বেগম। এরপর থেকে আঙ্গুরী নানির কাছে থাকা শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে নানিও চলে যান পরপারে। স্থানীয় এক সমাজকর্মীর মাধ্যমে আঙ্গুরীর জায়গা হয় ফরিদপুর শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে।
কেন্দ্রের উপ-প্রকল্প পরিচালক সৈয়দা হাসিনা আক্তার এই প্রতিবেদককে বলেন, ‘আঙ্গুরী যখন এখানে আসে তখন তার বয়স ছিল তের বছর। এখন আঙ্গুরীর বয়স ১৮ বছর ১৯ দিন। দীর্ঘ ৫ বছর সে এখানে আছে। সে নুরুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ে। মেয়েটিকে সেলাই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ করে তোলা হয়েছে। বর্তমানে সে সেলাইয়ের কাজে যথেষ্ট পারদর্শী।১৮ বছর হওয়ার পর সরকারি নির্দেশনা মোতাবেক আমরা তার জন্য উপযুক্ত পাত্র খুঁজতে থাকি। ওর দাদাবাড়ির এলাকারই একজন পাত্র পেয়ে যাই। ছেলে ফার্নিচারের কাজ করে। পরে আমরা জেলা প্রশাসক স্যার এবং জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপপরিচালক স্যারের সাথে আলোচনা
সাপেক্ষে বিয়ের দিন নির্ধারণ করি।
তিনি আরও বলেন, মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবারের একটি মেয়ের যেভাবে বিয়ে হয়, ঠিক সেভাবেই আয়োজন করা হয়েছে। কোনো কিছুর কমতি করা হয়নি। যাতে তাদের মনে কোনো কষ্ট না থাকে। বিয়েতে দুজনকে জামা-কাপড়সহ বিভিন্ন উপহার দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মেয়েকে একটি সেলাই মেশিনও দেওয়া হয়েছে। ছেলেকে তার কাজের সহায়ক হয় এমন কিছু করতেও আমরা প্রস্তুত আছি।
জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে যারা বেড়ে উঠছে তাদের প্রতি আমরা সব সময় বিশেষ খেয়াল রাখি। এখানে যারা আসে তাদের অনেকের মা, বাবা নেই। আশ্রয়হীন থাকে। তারা যেন এখান থেকে প্রশিক্ষিত হয়ে নিজের পায়ে দাড়াতে পারে সে ব্যবস্থা আমরা আরে দিচ্ছি। আজ আঙ্গুরী নামের যে মেয়েটির বিয়ে হচ্ছে সে দীর্ঘ পাঁচ বছর এখানে ছিলো। তাকে প্রশিক্ষিত করে তোলা হয়েছে। ভালো ছেলে দেখে তার বিয়ে দেওয়া হচ্ছে। সে যেন জীবনে সুখী হতে পারে তার সব ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ভবিষ্যতেও আমাদের এ জাতীয় কর্মকান্ড অব্যাহত থাকবে।