রকিবুজ্জামান, মাদারীপুর প্রতিনিধিঃ শীতকাল আর পিঠা একসূত্রে গাঁথা। তাই শীতের আমেজে পিঠা বিক্রি বেড়েছে কয়েকগুন। প্রকৃতিতে শীতল হাওয়া বইতে শুরু করার সঙ্গে সঙ্গে মাদারীপুরের কালকিনির বিভিন্ন স্থানে রাস্তার মোড়ে গড়ে উঠেছে ভ্রাম্যমাণ শীতকালীন পিঠার দোকান। প্রতিদিন বিকাল থেকে এসব দোকানে পিঠার স্বাদ নিতে ভিড় জমছে মানুষের। বিক্রেতারা পিঠা তৈরি করছেন আর ক্রেতারা দাঁড়িয়ে বা বসে বসে গরম গরম এসব শীতের পিঠা কিনে নিচ্ছেন। এ যেন শীতের আরেক আমেজ।
কালকিনি বাজার ঘুরে দেখা যায়,বিভিন্ন মোড়ে ও পাড়া-মহল্লায় স্বল্প আয়ের লোকজন গড়ে তুলেছেন অস্থায়ী পিঠার দোকান।পৌর শহরের কালকিনি মডার্ন হাসপাতালের সামনে,থানার সামনে,মাছবাজার এলাকায় এসব পিঠার দোকান রয়েছে। মূলত সেখানে ভাপা ও চিতই পিঠা বেশি তৈরি হচ্ছে। রিকশা চালক, দিনমজুর, শিশু-কিশোর, চাকরিজীবী, শিক্ষার্থীসহ সব শ্রেনী-পেশার মানুষ পিঠার দোকানের ক্রেতা। কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পথে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে অনেককে আবার পিঠা খেতে দেখা যায়। অনেকে আবার পরিবারের সদস্যদের জন্য পছন্দের পিঠা নিয়ে যাচ্ছেন।
পিঠা বিক্রেতা মোঃ সোহাগ হোসেন কালকিনি মর্ডান হাসপাতালের সামনে অস্থায়ী চৌকি পেতে চালের গুঁড়া, ভর্তা আর পস্নাস্টিকের পিরিচ সাজাতে ব্যস্ত এরপর গরম কড়াইয়ে চালের গোলা দিয়ে ঢেকে দেন। পিঠাটি খাওয়ার উপযোগী হতে কিছু সময় লাগে। এরই মধ্যেই ক্রেতার ভিড় জমে যায় তার দোকানে।
এরই মাঝে একজন ক্রেতা একটি পিঠা ভেঙে ভর্তা মিশিয়ে মুখে পুরে বলেন, যেহেতু এটা শীত মৌসুম বাসাবাড়িতে তো পিঠা বানায় সেটার একটা স্বাদ আর এখানকার পিঠার মধ্যে স্বাদের বেশ পার্থক্য। বাসাবাড়ির পিঠায় সাধারণত আইটেমটা কম থাকে। আর এখানে যে পিঠা তৈরি হয় বিশেষ করে এখানকার ভর্তার আইটেমটা অসাধারণ, চার-পাঁচটা আইটেমের ভর্তা থাকে সবগুলোই আলাদা আলাদা সাধের সবকিছু মিলে এখানে বসে পিঠা খাওয়ার চমৎকার একটা পরিবেশ মনে হয়। সাকিব নামের আরেক জন ক্রেতা জানান, বাসাবাড়িতে পিঠা বানানো বেশ ঝামেলার। খেতেও তো ইচ্ছে। তাই কী আর করা। দোকান থেকেই কিনে খাই। তিনি প্রতিদিন সন্ধ্যায় বাসায় ফেরার পথে দুটি চিতই পিঠা খান। পুরো শীতকাল সন্ধ্যার নাশতা পিঠা দিয়েই সারেন। পাশ থেকে খোকন নামের আরেকজন বলেন, ঘরে পিঠা বানানোর রীতি কমে যাচ্ছে। সেটা পুষিয়ে দেয় রাস্তার পাশের এই দোকানগুলো।
পিঠা বিক্রেতা সোহাগ জানান, এবার শীত শুরু হাওয়ার পরই প্রচুর পিঠা বিক্রি হচ্ছে। বিকাল ৪ টা থেকে রাত ৯ টা পর্যন্ত পিঠা বিক্রি হয়। তবে সন্ধ্যায় পিঠার চাহিদা বেড়ে যায়।পিঠা বিক্রি করে প্রতিদিন ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা আয় হচ্ছে।বছরের অন্য সময়ে মৌসুমী ফলের ব্যবসা করলেও শীতের সময় তিনি পিঠা বিক্রি করে সংসার চালান। বিক্রি বেশি হওয়ায় চাপ সামলাতে পিঠা তৈরিতে তাকে সাহায্য করছেন তার স্ত্রী সাথী বেগম।
সাথী বেগম বলেন, সারা বছর ঘরের কাজই সামলাই কিন্তু শীত এলে স্বামীর সাথে পিঠা বিক্রি করি। কর্মজীবী ও ব্যস্ত মানুষেরা বাড়িতে পিঠা তৈরি করে খেতে পারেনা।তাদের এই পিঠা খাওয়ার চাহিদা মিটাতে পেরে ভালই লাগে।